আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা / সুখ-সমৃদ্ধি কামনায় শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা ॥ আমিন

আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা / সুখ-সমৃদ্ধি কামনায় শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা ॥ আমিন

এম.এ হায়দার সরকার, টঙ্গী :-
আখেরী মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো এবারের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। লাখ লাখ মানুষের কাঙ্খিত আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলীগ জামায়াতের মুরুব্বি হাফেজ মাওলানা যোবায়ের। বেলা ১০ টা ১৯ মিনিট থেকে শুরু করে ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ২৬ মিনিট স্থায়ী আবেগঘন আখেরী মোনাজাতে অনুষ্ঠি হয়। মোনাজাতে মাওলানা যোবায়ের বলেন, হে আল্লাহ, আমাদের গুনাহ খাতা মাফ করে দেন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মালিক, আমরা তো আপনার কাছেই চাইবো ইত্যাদি গভীর আকুতিপূর্ণ এ মোনাজতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ২০১৮ সালের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। মোনাজাতে সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের নিরাপত্তা, মুক্তি এবং ইহকাল ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনা করে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে কাকুতি মিনতি জানানো হয়। গভীর আবেগপূর্ণ পরিবেশে ‘আমিন, আল্লহুম্মা আমীন’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে ও দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল
		 আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হলো দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা /  সুখ-সমৃদ্ধি কামনায় শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা ॥ আমিনআলামীনের দরবারে অপার করুনা ও অশেষ রহমত কামনা করেছেন দেশ-বিদেশের অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমান। সমগ্র বিশ্বে দাওয়াতে তাবলীগের ব্যাপক প্রসার এবং সকল মুসলমানের ঈমানী শক্তি বৃদ্ধির জন্য আল্ল¬¬াহর সাহায্য প্রার্থনা করেন। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছিল ১২ জানুয়ারি, পরে ১৪ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয় ১৯ জানুয়ারি। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের আগে চলে হেদায়েতি বয়ান। এ বয়ানে তাবলিগ জামাতের ৬টি উসুল নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আখেরী মোনাজাতে এপর্বেও শরীক হয়েছেন ভিআইপিদের অনেকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, পদস্থ সরকারী কর্মকর্তাসহ দলমত নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। ধনী-গরীর, নেতা-কর্মী নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশা-গোষ্ঠীর মানুষ। এসময় আল্ল¬¬াহর দরবারে দু’হাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন সভায়। মোনাজাতে সময় দক্ষিণে আন্তরজাতিক বিমান বন্দর উত্তরে বোর্ড বাজার, পুর্বে পুবাইল রোডের মাঝুখান মিরের বাজার ও টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরী । পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত অন্তত ১০বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিস্তৃত বিশাল জনসমদ্রে পরিনতি হয়। মোনাজাতের সময় আকাশ কাপিয়ে ধ্বনি উঠে-‘ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ’।
মুঠোফোন,রেডিও এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাধে দেশ-বিদেশের আরো লাখ লাখ মানুষ এক সঙ্গে হাত তুলেছেন নিজ নিজ গুনাহ মাফের জন্য গুনাহগার, পাপী-তাপী বান্দা প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন আল্লাহর দরবারে। এপর্বেও স্বাগতিক বাংলাদেশ ১৬ জেলার তাবলিগ অনুসারি মুসল্লি ছাড়াও বিশ্বের ছাড়াও বিশ্বের ৭৬টি দেশের প্রায় ৫ হাজার তাবলীগ অনুসারী বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। সকাল থেকে দিক নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখো মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বেলা ১০ টা ১৯ মিনিটে। জনসমূদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নিরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তুলেন আল্লাহর দরবারে । সকল পথের মোহনা হয়ে উঠে টঙ্গী তুরাগ তীরের ইজতেমার দিকে। রাজধানী ঢাকা ছিল প্রায় ফাঁকা। টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপনীবিতান, অফিসসহ সব কিছু ছিল বন্ধ। সকলের প্রানপন চেষ্টা ছিল দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের সাথে মোনাজাতে শরীক হয়ে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। ২৬ মিনিটের মোনাজাতে মাওলানা যোবায়ের প্রথম ১১ মিনিট মূলত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ১৫ মিনিটে বাংলা ভাষায় দোয়া করেন। গতকাল আখেরী মুনাজাতে শরীক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে র্ধমপ্রাণ মুসল্লিরা এপর্বেও টঙ্গী মুখে ছুটতে থাকেন গত শনিবার থেকে। বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহনকারীরা ছাড়াও কেবলমাত্র আখেরী মোনাজাতে শরীক হতে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লি¬¬গন বাস, ট্রাক, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন,ও লঞ্চে যে যেভাবে পাড়ছে টঙ্গীতে পৌছে অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাজধানী ঢাকার সরকারী বেসরকারী অফিস, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বত্রই ছিল পূর্ণ ছুটির আমেজ। গতকাল সকাল থেকে টঙ্গীমুখী সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় দীর্ঘ পথ হেঁটে টঙ্গী পৌঁছতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। গতকাল ভোররাত থেকে যানবাহন শূন্য সড়ক-মহাসড়ক ও নদীপথে টুপি পাঞ্জাবী পরা মানুষের বাধঁভাঙ্গা জোয়ার শুরু হয়। চারিদিকে যত দূর চোখ যায় মানুষ আর মানুষ । সকাল আটটার মধ্যে গোটা এলাকা ধর্ম প্রান মুসল্লিদের মহাসমুদ্রে পরিণত হয়। তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বী মাওলানা যোবায়েরুল হাসান মারা যাওয়ায় পর গত কয়েক বছর যাবত ইজতেমার মোনাজাত পরিচালনা করতেন দিল্লি¬¬ভিত্তিক তাবলিগের প্রধান মারকাজের শুরার অন্যতম সদস্য মাওলানা সা’দ। তাবলিগ জামাতের নেতৃত্ব নিয়ে দিল্লির মারকাজ এবং দেওবন্দ মাদরাসার মধ্যে সম্প্রতি দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, যার প্রভাবেই বাংলাদেশ তাবলিগ জামাতের মধ্যেও দু’ভাগ হয়ে যায়। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদের বিরোধীরা তার ঢাকা আগমনের সময় বিমানবন্দরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এরূপ পরিস্থিতিতে ইজতেমায় যোগ না দিয়ে পরে নিজ দেশ ভারতে ফেরত যান সাদ কান্ধলভি। এসমস্যার আগে মাওলানা সা’দ মোনাজাত পরিচালনা করতেন ।
মোনাজাতে হাফেজ মাওলানা যোবায়ের বলেন, হে আল্ল¬াহ আমাদের অন্তর থেকে কুফরি, মোনাফেকি দূর করে দাও। হে আল্ল¬¬াহ, তোমার নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দাও। হে আল্ল¬াহ, আমাদের সকল নেক চাহিদা পূরণ করে দাও। হে রাহমানুর রাহীম আমাদের ওপর রহম করো। আমাদেরকে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি দাও। আমাদের ওপর দয়া করো যেভাবে তুমি তোমার নেক বান্দাদের ওপর রহম করেছ। হে আল্ল¬¬াহ, আমাদের পরিপূর্ন ঈমান দাও। তোমার আজাব থেকে পরিত্রাণ দিয়ে জান্নাত নসিব করো। জাহান্নামের আগুন আমাদের জন্য হারাম করে দাও। হে আল্লাহ তুমি তো ক্ষমাশীল, তোমার কাছেইতো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বীনের উপর আমাদের চলা সহজ করে দাও। হে আল্ল¬াহ, তুমি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টি মাফিক চলতে পারি সে তওফিক দাও। দুনিয়ার সকল বালা-মসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। নবীওয়ালা জিন্দেগী আমাদের নসীব করো। ইজতেমাকে কবুল করো। ইজতেমার আয়োজনে যারা শ্রম দিয়েছে তাদের কবুল করো। যারা তোমার কাছে হাত তুলেছে সকলকে তুমি কবুল করো। দাওয়াতে তাবলিগকে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করো।
দ্বিগুণ ভাড়া আদায় : আখেরি মোনাজাত শেষে দুর দূরান্তের মুসল্লিরা নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে একযোগে যাত্রা করে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীবাহী কোন গাড়ি না থাকায় বাধ্য হয়েই অনেকে দ্বিগুণ/তিনগুণ ভাড়া দিয়ে পিকআপ ভ্যান ও রিকশা ভ্যানে করে যেতে দেখা গেছে। এছাড়াও টঙ্গী কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস সংলগ্ন মহাসড়কে শেরপুরগামী অপু ট্রাভেলসের একটি বাসের হেলপার যাত্রীপ্রতি ৩শ’ টাকা করে ভাড়া হাকাচ্ছেন। অথচ টঙ্গী মিলগেট থেকে শেরপুর ভাড়া জনপ্রতি দেড়শ’ টাকা করে বলে এক যাত্রী অভিযোগ করেন। এদিকে গাজীপুর চৌরাস্তার যাত্রী মো. তাইজুদ্দিন ক্ষোভের সাথে বলেন, টঙ্গী মিলগেট থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার গাড়ি ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তু পিকআপ ভ্যানের চালক আমাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে নিচ্ছেন।
২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমা শুরু ১১ জানুয়ারি : টঙ্গীর তুরাগতীরে আগামী বছরের ১১ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে। আয়োজক কমিটির মুরব্বি প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, ইজতেমার দেশি-বিদেশি সংগঠকরা গত বৃহস্পতিবার ইজতেমা ময়দানে এক বৈঠকে এ তারিখ ঠিক করেন। প্রথম পর্ব শেষে ১৮ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। তিনদিন করে প্রতিটি পর্বই আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এবারের মত আগামী বছরও দুই পর্বে দেশের ৩২টি জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নেবেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় যেসব জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেছেন তারা আগামী ২০১৯ সালের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে তাদের জন্য আঞ্চলিক ইজতেমার ব্যবস্থা থাকবে। বৈঠকে জোড় ইজতেমার তারিখও ঠিক করা হয়েছে। সাধারণত বিশ্ব ইজতেমার অন্তত ৪০ দিন আগে জোড় ইজতেমা হয়। আগামী বছর পহেলা ডিসেম্বর পাঁচ দিনের ওই জোড় ইজতেমা শুরু হবে এবং শেষ হবে ৫ ডিসেম্বর।
বিশ্ব ইজতেমায় ২পর্বে ২বিদেশিসহ ৭ মুসল্লির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার মোবারক আলী ওরফে মোহর আলী (৬০), ঢাকার দক্ষিণ কেরাণিগঞ্জের মো. শহিদুল ইসলাম (৫৬) নামের দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়। প্রথম পর্বে মালয়েশিয়ান নাগরিক নূরহান বিন আব্দুর রহমান (৫৫), আফ্রিকা মহাদেশের দেশ জিবুতির আব্দি রহমান জুব্বাত (৬৬) ময়দানে মারা যান। এছাড়াও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চরবাইতা গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (৫৪), মাগুরার শালিখা থানার খরিশপুর এলাকার কাজী আজিজুল হক (৬৫) ও ঢাকার আগারগাঁয়ের মামুন ওরফে মনা (৩৩) রাস্তা পারাপারের সময় মারা যান।
ভিক্ষুকের আনাগোনা : বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শুরু হওয়ার আগেই ময়দানের চারপাশের ফুটপাতগুলোতে ভিক্ষুকের আনাগোনা বেড়ে যায়। নোংরা ও ময়লা কাপড় পরে সাহায্যের জন্য মুসল্লিদের পথ আগলে ধরায় অনেক মুসল্লিরা¬ বিব্রতবোধ করেন। এদিকে বিদেশি মুসল্লিদের নিবাস এলাকায় ভিক্ষুকদের ভিড়তে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষুকদেরকে বারবার বিদেশিদের পথ আগলে ধরে ভিক্ষা চাইতে দেখা গেছে।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির সন্তোষ প্রকাশ: টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, আলহামদুলিল্লাহ। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবারের ৫৩তম ইজতেমার দু’পর্বের সমাপ্তি হয়েছে। ইজেতেমার সার্বিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুসল্লিদের আসতে এবং ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকায় আইনশংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সরকারের প্রতি ইজতেমা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর-২ আসনের এমপি আলহাজ্ব মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, সরকারের সকল সেবাদান প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতায় আল্লাহর রহমত কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার ছাড়াই এবারের বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন করতে পেরেছি। এবারের ইজতেমা আগের বছরের চেয়েও অনেক ভালোভাবে সমাপ্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলে নিরলস পরিশ্রম করে বিশ্ব ইজতেমাকে সাফল্যমন্ডিত করায় দেশবাসীসহ সবাইকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
বাড়ি ফিরতে বিড়ম্বনা : আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পর এক সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ ফিরতে শুরু করলে সর্বত্র মহাজটের সৃষ্টি হয়। টঙ্গী স্টেশনে ফিরতি যাত্রীদের জন্য অপেক্ষমান ট্রেনগুলোতে উঠতে মানুষের জীবনবাজির লড়াই ছিল । ট্রেনের ভিতরে জায়গা না পেয়ে ছাদে ও দরজা-জানালায় ঝুলে শত শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে মানুষের জন্য ট্রেন দেখা যাচ্ছিল না। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আশুলিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ফিরতি মুসল্লি¬¬দের বিড়ম্বনা ও কষ্টের সীমা ছিল না। চার-পাঁচ দিন ধরে টঙ্গীতে জমায়েত হওয়া মুসল্লি¬রা মোনাজাতের পর এক যোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরতে চাইলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন। হাজার হাজার বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর ও মহিলা মাইলের পর মাইল হেটে মোনাজাতে শরীক হন এবং একইভাবে ফিরেন।
মোনাজাতে অংশনিতে আশা মুসল্লিদের কথা: জামালপুর থেকে আশা মোহাম্ম জাকির (৬০) তিনি মানবজমিনকে জানান বিশ্ব ইজতেমায় এসেছে গত বুধবার। বয়স হয়েছে তাতে কি বয়স ভারে হাটতে কষ্ট হলেও এত বড় মজমায় আসতে পারছি তাতে অনেক শান্তি , কেন এসেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ইজতেমায় এলে ঈমান ও আমলের বয়ান শুনে অনেক কিছু শিখা য়ায। পাপ মুছনের পথ খুঁজে পাওয়া যায়। কুমিল্লা জেলার মোহাম্মদ ওমর আলী (৬৫) ইজতেমায় অংশ নিতে গত বৃহস্পতিবার রাতেই এসেছেন মাঠে। তিনি বলেন, জীবনে বুঝে না বুঝে অনেক পাপ করেছি। তাই ইজতেমায় গুনা মাপ চাইতে আইছি। দোয়ার মাধ্যমে আল্ল¬াহ যদি পাপ থেকে মুক্তি দেন সেই আশায় দোয়া করে চলে যাইতেছি। গাজীপুর জেলার কাপাশিয়া থানার মোহাম্মদ হোসেন (৬৫) ভোরে এসেছেন ইজতেমা এলাকায়। মূল মাঠে যেতে না পারায় মন্নু টেক্সটাইলের মাঠে বসে আছেন মোনাজাতে অংশ নেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, বড় লোকদের টাকা আছে তারা ইচ্ছা করলে হজ্ব করতে পারেন। আমি গরিব মানুষ ইচ্ছা করলেও হজ্ব করতে পারবো না, তাই ইজতেমাই আমাদের জন্য হজের মত। আল্লাহ কাছে নিজের এবং দেশের সবার জন্য দোয়া চাইতেই ইজতেমায় মোনাজাত করতে এসেছি।
ময়দানের ভেতরে হকারদের উৎপাত: প্রতিবছর ইজতেমা ময়দানের বেশ দূরত্ব বজায় রেখে হকাররা তাদের বিভিন্ন মালামালের পসরা সাজিয়ে বসতো। কিন্তু এবছর খোদ ময়দানের ভেতরেই বিশেষ করে ৮নং গেটে তাদেরকে শীতের কাপড় ও টুপি, পাঞ্জাবী-পায়জানা, মধু, আতর-তাসবিহ ও মেছওয়াকসহ নানা ধরনের পণ্যের দোকান সাজিয়ে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। এতে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতায়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment